বৃন্দাবনের এই মন্দিরে আজও শোনা যায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মোহন-বাঁশির সুর সনাতন ভাবনা ও সংস্কৃতি

বৃন্দাবনের পর্যটকদের কাছে অন্যতম প্রধান আকর্ষণ নিধিবন মন্দির। এই মন্দিরেই লুকিয়ে আছে অনেক রহস্য। যা আজও পর্যটকদের সমান ভাবে আকর্ষিত করে। নিধিবনের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা রহস্য-ঘেরা সব গল্পের আদৌ কোনও সত্যভিত্তি আছে কিনা, তা জানা না গেলেও ভগবান শ্রীকৃষ্ণের এই লীলাভূমিতে এসে আপনি মুগ্ধ হবেনই। চোখ টানবে মন্দিরের ভেতর অদ্ভুত সুন্দর কারুকার্যে ভরা রাধা-কৃষ্ণের মুর্তি।

জঙ্গলে ঘেরা এই মন্দিরে বাঁকে বিহারীর পবিত্র বিগ্রহ রয়েছে। নিধি অর্থে সম্পদ এবং চারপাশ জঙ্গলে ঘেরা বলে বন। সেখান থেকেই এই মন্দিরের নাম নিধিবন। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল এই জঙ্গলের সব গাছের শাখাই নিম্নমুখী। ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে শ্রদ্ধা জানিয়ে গাছের শাখা-প্রশাখা নিচের দিকে মুখ করে রয়েছে বলে মনে করা হয়। যদিও এই মন্দির ও তার আশেপাশের এলাকা অত্যন্ত রুক্ষ, এই সব গাছগুলো সারা বছরে সবুজে ভরে থাকে। স্থানীয় বাসিন্দা ও মন্দিরের কর্মচারিদের বিশ্বাস এই সব গাছ আসলে বাঁকে বিহারীর লীলাখেলার সঙ্গী গোপীনির দল।
রাত নামলেই নাকি বদলে যায় মন্দির এলাকা? তাই বিকেলের পরই বন্ধ করে দেওয়া হয় মন্দিরের দরজা। স্বয়ং বাঁকে বিহারী নাকি আজও এখানে রাইকিশোরী ও অন্য গোপীনিদের সঙ্গে লীলাখেলা করেন। মন্দিরের চারপাশ ঘিরে রাখা এই গাছগুলোই গোপীনিতে পরিবর্তিত হয়ে রাসলীলায় অংশ নেন। মন্দির চত্বরে ঘুরতে ঘুরতেই একটি ছোট কুয়ো নজরে পড়বে আপনার। মনে করা হয়, রাসলীলার সময় একদিন রাধা তৃষ্ণার্ত হয়ে পড়লে, তাঁর তৃষ্ণা মেটাতে খোদ শ্রীকৃষ্ণ এই কুয়োটি তাঁর বাঁশি দিয়ে খনন করেন।


সন্ধ্যারতির পরই এই মন্দিরের সমস্ত দরজা-জানালা বন্ধ করে দেওয়া হয়। বাইরে বের করে দেওয়া হয় সমস্ত পর্যটক ও পূণ্যার্থীদের। সকাল পর্যন্ত এখানে যে কোনও কারোর প্রবেশ নিষেধ। এই মহারাসলীলা কাউকে চাক্ষুস করতে দেওয়া হয় না। কয়েকজন অতি-উত্‍সাহী কখনও সখনও লুকিয়ে সন্ধের পর মন্দিরে থেকে গিয়েছিলেন। সকালবেলা তাঁদের হয় মৃত, নয়তো পাগল অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি সন্ধের পর বন্ধ মন্দির থেকে ভেসে আসা ঘুঙুরের শব্দ অনেকেই শুনেছেন। রাধা-কৃষ্ণকে সন্তুষ্ট করতে সন্ধ্যারতির পর পুরোহিতরা এখানে শাড়ি, মিষ্টি, চুড়ি, পান এই সব রেখে যান। সকালে সেই সবকিছু ছড়ানো-ছিটোনো অবস্থায় পাওয়া যায়। মিষ্টি, পান কেউ খেয়েছে বলেও বোঝা যায়।
এই মন্দিরে সত্যিই ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বাল করেন বলেই বিশ্বাস করেন স্থানীয়রা। বৃন্দাবনের মানুষের ভক্তি ও প্রেম কৃষ্ণভগবানকে এই মন্দিরে ফিরিয়ে আনে বলে মনে করেন তাঁরা। অনেক ঐতিহাসিক ও বৈজ্ঞানিক এই মন্দিরের রহস্য উদ্ঘাটনের চেষ্টা করেছেন। তবে কিছু একটা অস্বাভাবিক এখানে রয়েছে বলে মেনে নিয়েছেন তাঁরাও ।

Share on Google Plus

About Unknown

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
    Blogger Comment
    Facebook Comment

0 comments:

Post a Comment