আমাদের প্রচলিত বিবাহ প্রথা নিয়ে অনেকেই জানেনা, তাই ভাবলাম সবার জ্ঞাতার্থে এই উত্তরগুলি পেইজে দিলে সবাই জানতে পারবে।
মনুসিংহতায় সেকালের অবস্থা অনুসারে ৮(আট) রকমের বিবাহ- পদ্ধতির বর্ণনা আছে। যেমনঃ-
১। ব্রাহ্ম বিবাহ
২। প্রজাপত্য বিবাহ
৩। আর্য্য বিবাহ
৪। দৈব বিবাহ
৫। অসুর বিবাহ বা আসুরিক বিবাহ
৬। গন্ধর্ব বিবাহ
৭। পিশাচ বা পৈশাচিক বিবাহ
৮। রাক্ষস বিবাহ
১। ব্রাহ্ম বিবাহ:- কন্যাকে বিশেষ বস্ত্র দ্বারা আচ্ছাদন করে স্বর্ণ
অলংকার ইত্যাদি দ্বারা সজ্জিত করে বিদ্বান ও সদাচর সম্পন্ন করিয়া, বরকে
স্বয়ং আমন্ত্রন করে বেদবেত্তাকে আহব্বান বা অর্চনা পূর্ব্বক মঙ্গলাচরণের
মাধ্যমে কন্যা দান করা হয় তাকে ব্রাহ্মবিবাহ বলে।
২। প্রজাপত্য
বিবাহ:- “তোমরা উভয়ে সুখে গার্হস্থ্য ধর্মের আচরণ কর”- এই আর্শীবাদ করে
যথাবিধি অলংকার ইত্যাদি দ্বারা অর্চনাপূর্বক বরকে যে কন্যা দান করা হয়
তাকে প্রজাপত্য বিবাহ বলে। এই বিবাহ প্রথা বর্তমানে বাঙালি হিন্দু সমাজে
প্রচলিত আছে।
৩। আর্য্য বিবাহ:- এই বিবাহে বরের নিকট হইতে এক বার
মাত্র দুইটি গো মিথুন গ্রহণ করিয়া যথা বিধি যজ্ঞ করিয়া কন্যা দান করে
তাকে আর্য্য বিবাহ বলে। এই বিবাহ প্রথা শুধু মাত্র ভারতের বিহারীদের মধ্যে
প্রচলিত।
৪। দৈব বিবাহ:- এই বিবাহে যজ্ঞবৃত ঋত্বিককে যজ্ঞ সম্পাদন
কালে কন্যা দান করাকে দৈব বিবাহ বলে। এই বিবাহ প্রথাগত বেশির ভাগই দেবতারা
মানব কন্যা গ্রহণকালীন সময়ে প্রাযোজ্য ছিল, বর্তমানে এই প্রথার অংশবিশেষ
পর্যন্ত নেই বললে চলে।
৫। অসুর বিবাহ বা আসুরিক বিবাহ:- যদি কোন লোক
রুপসী তরুণীর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ঐ মেয়ের পিতা মাতার সমীপে অর্থ প্রদান করে
বা ঐ মেয়ের কোন আত্মীয় বা আত্মীয়কে অর্থের সাহায্যে ভুলিয়ে বা অন্য
কোনও উপায়ে হাত করে, তাকে এনে বিবাহ করে; তাকে বলা হয় আসুরিক বিয়ে।
আসুরিক বিয়ে আজকাল মাঝে মাঝে হয়, তবে লোকে তা বুঝতে বা জানতে পারে না।
তবে কন্যার বা আত্মীয়ের অমতে এ সব করা উচিত নয়।
৬। গন্ধর্ব
বিবাহ:- পিতা মাতা প্রভৃতি গুরুজনের অজ্ঞাত সারে বরকন্যা পরস্পরের প্রতি
অনুবক্ত হইয়া পরস্পরের যে পাণিগ্রহন করে, সেই বিবাহ প্রথাগতকে গন্ধর্ব
বিবাহ বলে। অর্থাৎ:- একজন যুবক-যুবতী যখন গোপনে প্রেম করে এবং কিছু সময় পর
সব গুরুজনের অজান্তে পালিয়ে বিয়ে করাকে গন্ধর্ব বিবাহ বলে।
৭।
পিশাচ বা পৈশাচিক বিবাহ:- কন্যা সুপ্তা বা প্রমত্তা অবস্থায় থাকিলে, গোপনে
ঐ কন্যার পাণি গ্রহণের নাম পৈশাচিক বিবাহ বলে। বর্তমান সামাজিক নিয়মের
বিস্তারিত ভাবে বলতে গেলে হচ্ছে:- যদি কোন তরুণ-তরুণীর মধ্যে গান্ধর্ব
বিয়ে করার উপায় না থাকে, তাহলে আর এক উপায় চলতে পারে। এ প্রথা
বাৎস্যায়নের যুগে ছিল। দু’জনে আগে প্রেম করবে, তারপর সুযোগ বুঝে গোপনে
নারীকে কোন মাদকদ্রব্য খাইয়ে অধজ্ঞানহীন ও উত্তেজিত করে যৌন মিলন করা,
তারপর পুরোহিত ডেকে সেই নারীকে বিয়ে করা। নারী রাজী না হলে- কারণ সে জানবে
তার অন্য কোনও গতি নাই।
৮। রাক্ষস বিবাহ:- কন্যার পিত্রাদিকে হত বা
আহত করিয়া রোদন পরায়ণা কন্যাকে বল পূর্ব্বক হরণ করার নাম রাক্ষস বিবাহ।
আরো একটু বিস্তারিত ভাবে বলছি:- যদি কোনও রুপসী নারীকে লাভ করা দুস্কর হয়ে
পড়ে, তখন তাকে কোনও বাগান বা পথ থেকে লোকজনের সাহায্যে জোর করে ধরে নিয়ে
গিয়ে তাকে পরে ব্রাহ্মণ ডেকে হোম করে বিয়ে করার নাম রাক্ষস বিয়ে।
পুরাকালে ক্ষত্রিয় রাজারা এইভাবে বাহুবলে বহু নারীকে ধরে এনে বিয়ে করত।
বর্তমানে এর চলন প্রায় নাই।
যে আট রকম বিয়ের কথা বলা হলো তার
মধ্যে প্রথম চার রকম-ব্রাহ্ম, প্রজাপত্য, আর্য্য ও দৈব বিয়ে থাকে বিভিন্ন
মন্ত্র ক্রমে। বর্তমানে প্রজাপত্য বিয়ের চলনই বেশি। বাঙালি হিন্দু বিবাহ
বলতে বোঝায় ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরা রাজ্য এবং বাংলাদেশরাষ্ট্রে
বসবাসকারী বাঙালি হিন্দুদের বিবাহ-সংক্রান্ত নিজস্ব প্রথা ও রীতিনীতি।
উচ্চবর্ণীয় হিন্দু সমাজের বিবাহে প্রধানত দুইটি আচারগত বিভাগ লক্ষিত হয়।
যথা, বৈদিক ও লৌকিক। লৌকিক আচারগুলি "স্ত্রী আচার" নামে পরিচিত। বৈদিক
আচারগুলির মধ্যে অবশ্য পালনীয় প্রথাগুলি হল কুশণ্ডিকা, লাজহোম, সপ্তপদী
গমন, পাণিগ্রহণ, ধৃতিহোম ও চতুর্থী হোম। বৈদিক আচারগুলির সঙ্গে লৌকিক
আচারগুলির কোনো সম্পর্ক নেই। লৌকিক আচারগুলি অঞ্চল, বর্ণ বা উপবর্ণভেদে এক
এক প্রকার হয়।
Subscribe to:
Post Comments
(
Atom
)
very thanks
ReplyDelete