কন্যাকুমারী মন্দির

কন্যাকুমারী মন্দিরটি ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের কন্যাকুমারী জেলার অন্তর্গত একটি শহর। ইংরেজিতে এই শহরকে Cape Comorin বা কুমারী অন্তরীপ বলা হয়। এই শহরটি ভারতের মূল ভূখণ্ডের দক্ষিণতম বিন্দুতে অবস্থিত। কন্যাকুমারী জেলার সদর শহর নাগেরকইল এই শহর থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। কন্যাকুমারী একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। প্রাচীনকালেও কন্যাকুমারী ছিল তামিলাকাম বা প্রাচীন তামিল দেশের দক্ষিণতম অঞ্চল। কন্যাকুমারী নামটি এসেছে হিন্দু দেবী কন্যাকুমারীর (যাঁর স্থানীয় নাম কুমারী আম্মান) নামানুসারে। এই শহরের সৈকত অঞ্চলে যেখানে আরব সাগর, ভারত মহাসাগর ও বঙ্গোপসাগর পরস্পর মিলিত হয়েছে, সেখানেই দেবী কুমারীর মন্দির অবস্থিত।
মা কন্যাকুমারী
আনুমানিক ৩০০০ বছরের কুমারী আম্মানকে পুজো করে আসছেন হিন্দু ভক্তরা। সমুদ্র সৈকতের কিনারায় পাথর দিয়ে তৈরি মন্দিরে দেবী কন্যাকুমারীকে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। মন্দিরের মুল ফটকটি উত্তর দিকে। এই ফটকটি বিশেষ কয়েকটি দিন ছাড়া প্রতিদিনই খোলা থাকে। এই মন্দিরে পূজো দেওয়ার একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। সাধারণত, দক্ষিণ ভারতের সমস্ত মন্দিরেই প্রবেশ কালে পুরুষদের গায়ের জামা খুলতে হয়। তারপরেই মন্দিরের অন্দরমহলে প্রবেশ করা যায়। কন্যাকুমারীতেও তাই। এখানে পূজা দেওয়ার আগে লারী-পুরুষ উভয়কেই সমুদ্রে মন্ত্র পড়ে স্নান করে, ভিজে জামা কাপড়েই প্রবেশ করতে হয়।
হিন্দু মতে দেবী কুমারী হলেন পার্বতীর আরেক রূপ।যাঁর রূপে মোহিত হয়ে মহাদেব তাঁকে বিয়ে করতে চায়। বিয়ের দিনই দেখা পাওয়া যায় না শিবের। কুমারী দেবীর বিয়ের দিন যা যা রান্না করা হয়েছিল তা সব ফেলে দেওয়া হয়। ভক্তরা মনে করেন, সেই সব রান্না না করা চাল, শস্য ফেলে দেওয়ায় সমুদ্রতট তৈরি হয়েছে।
আবার রামায়ণ থেকে এই কন্যাকুমারী মন্দিরের উল্লেখ পাওয়া যায়। অনেকেই মনে করেন, রাম- রাবণের যুদ্ধে মৃত লক্ষ্মণের দেহে প্রাণ আনার জন্য সঞ্জীবনী গাছের মূল আনতে গিয়েছিল হনুমান। কিন্তু গাছ না চেনায় সে পড়েছিল মহা বিপদে। শেষে গাছ না চেনার জন্য মারুনথুভাজ মালাই নামে পুরো পাহারটাই তুলে নিয়ে গিয়ে হাজির করেছিলেন অগস্থা মুনির সামনে। আসলে আগস্থা মুনি ছিলেন আয়ুর্বেদিক শাস্ত্রের পণ্ডিত। স্থানীয় বাসিন্দারা মনে করেন, কন্যাকুমারীর কিছু দূরেই অগস্থে্স্বরম নামে একটি গ্রাম ছিল। সেটি আজ একটি আশ্রমে পরিণত হয়েছে। পর্যটকেরা সেই পাহাড়ে উঠে আশ্রমে যান। সেখান থেকেই পরিষ্কার দেখা যায় কন্যাকুমারী মন্দিরটি।
এই শহরের প্রধান পর্যটনকেন্দ্রগুলির মধ্যে দেবী কুমারীর মন্দির, বিবেকানন্দ রক মেমোরিয়াল, প্রাচীন তামিল কবি তিরুবল্লুবরের ১৩৩ ফিট উঁচু মূর্তি এবং গান্ধীমণ্ডপম্‌ (ভারত মহাসাগরের জলে মহাত্মা গান্ধীর চিতাভষ্ম বিসর্জনের আগে এখানে তা রাখা হয়েছিল) রয়েছে।
Share on Google Plus

About Unknown

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
    Blogger Comment
    Facebook Comment

0 comments:

Post a Comment