কাশীধাম

কাশী বিশ্বনাথ মন্দির
পুণ্যতোয়া গঙ্গায় পশ্চিম পাড়ে বরুণা ও অসি নদীর সঙ্গমে হিন্দুদের পবিত্র তীর্থ স্থান কাশী। এটি উত্তরপ্রদেশের বারাণসীতে অবস্থিত। গঙ্গাতীরের এই প্রাচীন জনপদ বারানসী একাধারে তীর্থক্ষেত্র এবং ঐতিহাসিক শহর। হিন্দুরা বিশ্বাস করেন, গঙ্গায় একটি ডুব দিয়ে এই মন্দির দর্শন করলে মোক্ষ লাভ করা সম্ভব।

বারাণসীর প্রধান দ্রষ্টব্য কাশী বিশ্বনাথের মন্দির। সেই কারণেই বারাণসীর অপর নাম কাশী। মন্দিরের ১৫.৫ মিটার উচুঁ চূড়াটি সোনায় মোড়া। তাই মন্দিরটিকে অনেকে স্বর্ণমন্দিরও বলে থাকেন। হিন্দুমতে, কাশী বিশ্বনাথ মন্দির 'জ্যোতির্লিঙ্গ' মন্দির নামে পরিচিত শিবের বারোটি পবিত্রতম মন্দিরের অন্যতম। দেবতা এখানে দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের শিব। এখানকার কয়েকটি বিখ্যাত মন্দির হলো তুলসীমানস মন্দির, ভারতমাতা মন্দির, কালভৈরব মন্দির, সংকটমোচন হনুমান মন্দির, বিড়লা মন্দির। গঙ্গাতীরে রয়েছে আলমগীর মসজিদ।

স্কন্দ পুরাণের কাশীখণ্ডে কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের উল্লেখ পাওয়া যায়। একাদশ শতাব্দীতে হরি চন্দ্র মন্দিরটি পুনর্নির্মাণ করেছিলেন। ১১৯৪ সালে মহম্মদ ঘোরি বারাণসীর অন্যান্য মন্দিরগুলির সঙ্গে এই মন্দিরটিও ধ্বংস করে দেন। এরপরেই আবার মন্দিরটি পুনর্নির্মিত হয়। এরপর কুতুবুদ্দিন আইবক মন্দিরটি ধ্বংস করেন। আইবকের মৃত্যুর পর মন্দিরটি আবার নির্মিত হয়। ১৩৫১ সালে ফিরোজ শাহ তুঘলক মন্দিরটি আবার ধ্বংস করেন। ১৫৮৫ সালে আকবরের রাজস্বমন্ত্রী টোডরমল আবার মন্দিরটি পুনর্নির্মাণ করেন। এরপর ১৬৬৯ সালে আওরঙ্গজেব পুনরায় মন্দিরটি ধ্বংস করে জ্ঞানবাপী মসজিদ তৈরি করান। এই মসজিদটি আজও মন্দিরের পাশে অবস্থিত। মসজিদের পিছনে পুরনো মন্দিরের কিছু ধ্বংসাবশেষ আজও দেখা যায়। বর্তমান মন্দিরটি ১৭৮০ সালে ইন্দোরের মহারানি অহিল্যা বাই হোলকর তৈরি করে দিয়েছিলেন। ১৮৩৫ সালে পাঞ্জাবের শিখ সম্রাট রঞ্জিত সিংহ মন্দিরের চূড়াটি ১০০০ কিলোগ্রাম সোনা দিয়ে মুড়ে দেন।

গঙ্গাতীরের প্রায় শতাধিক নদীঘাট এখানকার বিশেষ আকর্ষণ। গঙ্গার ঘাটের ধারে রয়েছে মন্দির, হাভেলি, রাজপ্রাসাদ ও সাধুসন্তদের আশ্রম। ঘাটগুলোর মধ্যে প্রধান হলো দশাশ্বমেধ ঘাট। প্রতিদিন সন্ধেবেলায় দশাশ্বমেধ ঘাটে গঙ্গারতি হয়। বারানসীর কয়েকটি বিখ্যাত ঘাট হলো অসি ঘাট, তুলসী ঘাট, কর্ণাটক ঘাট, হরিশচন্দ্র ঘাট, বিজয়নগর ঘাট, কেদারা ঘাট, মানস সরোবর ঘাট, দ্বারভাঙা ঘাট, অহল্যাবাঈ ঘাট, দশাশ্বমেধ ঘাট, প্রয়াগ ঘাট, মণিকর্ণিকা ঘাট ইত্যাদি। এখানে প্রতিটি ঘাটই পরস্পরের সঙ্গে সংযুক্ত।

অন্যান্য দেবদেবীর মূর্তিও রয়েছে এখানে। মূল মন্দিরের সামনে সুবিশাল একটি হনুমান মূর্তি রয়েছে। সীতামারি গ্রামটি বেশ নির্জন ও সবুজে মোড়া। বিন্ধ্যাচল বিখ্যাত বিন্ধ্যাবাসিনী মন্দিরের জন্য। এটি সতীপীঠ। এখানে অষ্টভুজা ও কালিখো মন্দির দুটি অবশ্যই দেখবেন। মন্দির দুটির অবস্থান অরণ্যে ছাওয়া পাহাড়ি টিলার ওপর।
Share on Google Plus

About Unknown

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
    Blogger Comment
    Facebook Comment

0 comments:

Post a Comment