মহাভারতের শহরগুলোর বর্তমান অবস্থান সনাতন ভাবনা ও সংস্কৃতি

‘মহাভারতের কথা অমৃত সমান, চাদঁ সওদাগর ভনে শুনে পূণ্যবান’। বাংলা ভাষাভাষীদের মধ্যে এই কথাটা শোনেনি এমন মানুষ কদাচিৎ পাওয়া যাবে না। সেটা বুঝেই হোক না আর না বুঝেই হোক। যদিও আজ আমাদের আলোচনার বিষয় মহাভারতের বানী কিংবা চাঁদ সওদাগরের কাহিনী নয়। উপরন্তু, মহাভারতে যে সময়ের এবং শহরগুলোর কথা বলা হয়েছে সেই শহরগুলোর বর্তমান অবস্থা কি, এবং ঠিক কোথায় এই শহরগুলো অবস্থিত সেটাই আমাদের আলোচনার বিষয়। আর এই আলোচনার তাগিদে আমরা যেমন অতীতের অনেক ঘটনাকে সামনে নিয়ে আসবো, তেমনি বর্তমানের পরিস্থিতির আলোকে শহরগুলোর অবস্থা বিচার করবো। আশা করি পাঠকেরা জেনে সুখী হবেন যে, মহাভারতের শহরগুলো কোনো কল্পিত শহর ছিল না। প্রাচীনকালের সাক্ষ্য নিয়ে সেই শহরগুলো আজও টিকে আছে এবং নতুন ইতিহাস ও আঙ্গিকে এগিয়ে গেছে অনেকদূর।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পুত্র প্রদ্যুম্ন প্রতিষ্ঠা করেন সাইবেরিয়া স্রামাজ্র্য ।
 গান্ধার: মহাভারতের শহরগুলোর মধ্যে অন্যতম শহর গান্ধার। মহাভারতের বর্ননার সঙ্গে মিলিয়ে নিতে গেলে দেখতে পাওয়া যায়, এই শহরটি সিন্ধু প্রদেশের সিন্ধু নদীর পশ্চিমতীরে অবস্থিত। মহাভারতের ধৃতরাষ্ট্রের স্ত্রী ছিলেন গান্ধার শহরের রাজা সুবলের কন্যা গান্ধারী। আর গান্ধারীর ভাই শকুনী ছিলেন দুর্যোধনের মামা, যিনি পান্ডবদের শঠতার মাধ্যমে পরাজিত করেছিলেন। অথবা বলা ভালো, তার কারণেই মহাভারতের যুদ্ধের সূচনা।

 তক্ষশীলা: মহাভারতের সময়কার অপর এক বিখ্যাত শহর তক্ষশীলা। গান্ধার দেশের রাজধানী ছিল এই শহর। বর্তমানে পাকিস্তানের রওয়ালপিন্ডিতেই ছিল ওই শহরের অবস্থান। মহাভারতের যুদ্ধের পর পান্ডবরা যখন হিমালয়ের দিকে যাত্রা শুরু করে তখন রাজা হিসেবে পরীক্ষিতের অভিষেক হয়। যদিও পরবর্তী সময়ে তিনি সাপের কামড়ে মারা যান। আর বাবার মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে পরীক্ষিতের সন্তান জনমেজয় তক্ষশীলার দিকে নাগরাজকে পাঠান এবং সেই নাগরাজের আক্রমনে অনেক সাপ মারা যায়।
 মাদরা দেশ: হিমালয়ের উত্তরের দেশকে বলা হতো মাদরা দেশ। আতরাই ব্রাহ্মনদের মতে, হিমালয়ের এই অংশকে তৎকালীন সময়ে বলা হতো উত্তরকুরু। সেসময় মাদরা দেশের রাজা ছিলেন শল্য। তারা বোন মাদরির বিয়ে হয় পান্ডুর সঙ্গে। সহদেব এবং নকুল ছিলেন মাদরির সন্তান। বর্তমানে নেপাল এবং ভারতের একাংশই হলো সাবেক মাদরা দেশ।

 উজ্জয়নী: বর্তমান ভারতের উত্তরপ্রদেশের সাবেক নাম ছিল উজ্জয়নী। উত্তরপ্রদেশের নৈনিতাল জেলার কাশিপুরের নিকটেই ছিল প্রাচীন উজ্জয়নী শহর। এই শহরেই গুরু দ্রোনাচার্য তার শিষ্য পান্ডবদের ধর্নুবিদ্যায় পারদর্শী করেছিলেন। কুন্তীর সন্তান ভীম এই শহরে শিবের মুর্তি স্থাপন করেছিলেন বলে এই শহরকে ভীমশঙ্কর নামেও ডাকা হতো।

 শিবি দেশ: ভারতের উত্তরের সীমান্তবর্তী দক্ষিণ পাঞ্জাবই হলো মহাভারতের শিবি দেশ। এই শহরের রাজা ঊষীণারের নাতি দেবিকার সঙ্গে যুধিষ্ঠিরের বিয়ে হয়েছিল। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের সময় পান্ডবদের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন ঊষীণারের সন্তান শৈব।

 বানগঙ্গা: ভারতের প্রাচীন নগর হরিয়ানাই হলো মহাভারতের বানগঙ্গা। কুরুক্ষেত্র থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই শহর। এখনও ভারতের তীর্থস্থান সম্বলিত স্থানগুলোর মধ্যে হরিয়ানা অন্যতম। প্রাচীন ভারতের রীতি-কৃষ্টি ইত্যাদির ছিটেফোটা এখনও হরিয়ানায় পাওয়া যায়। প্রতিবছর বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অনেক পর্যটক এখানে ঘুরতে আসেন।




 হস্তিনাপুর: উত্তরপ্রদেশের একটি বিখ্যাত স্থানের নাম মেরুত। আর এই মেরুতই ছিল মহাভারত আমলের হস্তিনাপুর। কৌরব এবং পান্ডব উভয়েরই রাজধানী ছিল হস্তিনাপুর। এই শহরকে কেন্দ্র করে অনেক ঘটনা জন্ম হয়েছিল তৎকালীন সময়ে। যুদ্ধের দামামা থেকে শুরু করে যুদ্ধ পরবর্তী অনেক ঘটনার সাক্ষী হয়ে আছে শহরটি।



 ইন্দ্রপ্রস্থ: পান্ডবদের হাতে প্রতিষ্ঠিত শহরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে প্রসিদ্ধ শহরের নাম ইন্দ্রপ্রস্থ। খান্ডব বন ধ্বংস করে এই শহরটি তৈরি করা হয়েছিল। পান্ডবদের সকল রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড এই শহর থেকে পরিচালিত হতো। এমনকি এখনও নয়াদিল্লির একটি স্থানের নাম আছে ইন্দ্রপ্রস্থ। আর সাবেক ইন্দ্রপ্রস্থ হলো বর্তমানের দিল্লি।

Share on Google Plus

About Unknown

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
    Blogger Comment
    Facebook Comment

0 comments:

Post a Comment